বর্তমানে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপে জাতীয় পরিচয় পত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যেকোন সরকারী বেসরকারী কাজে এটির ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু যদি এটি হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায় অথবা সংশোধনের প্রয়োজন হয় তখন কি করবেন?

চলুন জেনে নিই সে সম্পর্কে আপনার করণীয় ও প্রতিকার বিষয়ে-
জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে দুঃশ্চিন্তা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পদক্ষেপ নিন তা নতুন করে তুলে নিতে। পুনরায় তোলার জন্য প্রকল্প পরিচালক, পিইআরপি, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন সরাসরি প্রকল্প অফিসে করা যাবে অথবা আপনার নির্দিষ্ট উপজেলা বা জেলা নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তার কার্যালয়ে করা যাবে।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে বিনা মূল্যে পাওয়া আবেদন পত্র পূরণ করতে হবে। আবেদনপত্রে আপনার পূর্ণনাম, পরিচয়পত্রের নম্বর ১৩ অথবা ১২ সংখ্যায় ভোটার নম্বর উল্লেখ করতে হবে। যদি পরিচয়পত্র নম্বর না থাকে, তবে ভোটার নম্বর দিতে হবে। এই নম্বর পাওয়া যাবে জেলা বা উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে।
তবে পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে প্রথমে আপনাকে স্থানীয় বা নিকটবর্তী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। ডায়েরির কপি, পূরণকৃত আবেদনপত্র (নিজে স্বাক্ষরিত), যোগাযোগের ঠিকানা ও ফোন নম্বরসহ আবেদনপত্রটি সরাসরি প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় বা জেলা/উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার দিন সংশ্লিষ্ট কার্যালয় থেকে প্রাপ্তি রসিদ (হারানো) দেবে এবং ওই রসিদ নিয়ে নির্ধারিত তারিখে আপনি আপনার পরিচয়পত্র হাতে পাবেন।
সাধারণত আবেদনের ৩৯ কার্যদিবসের মধ্যে নতুন পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়। তাই এই দিনের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে নিবেন। কোন দালালের ফাঁদে পা দিবেন না।
সংশোধন করবেন কীভাবে : সাধারণত জাতীয় পরিচয়পত্রে দুই ধরনের ভুল থাকতে পারে। ছাপা-সংক্রান্ত ভুল ও তথ্যের পরিবর্তন। ছাপা সংক্রান্ত ভুলগুলো খুব সহজভাবেই সমাধান করা যায়। এ জন্য আবেদন করতে হয় প্রকল্প পরিচালক বরাবর।
নির্ধারিত আবেদন ফরম সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিসে পাওয়া যায়। সংগৃহীত আবেদনপত্রটিতে পরিচয়পত্র নম্বর, ভুল তথ্য ও সংশোধিত তথ্য উল্লেখ করার জন্য নির্ধারিত ঘর রয়েছে। আবেদনপত্রের নিচে স্বাক্ষর, নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর লিখতে হবে। আবেদনপত্রের আগের ভুল তথ্যসংবলিত ভোটার পরিচয়পত্রটি সংযুক্ত করে দিতে হবে। কারণ কমিশন আপনাকে নতুন করে পরিচয়পত্র প্রদান করবে। তথ্য পরিবর্তনের জন্য আপনাকে আবেদনপত্রের সঙ্গে সংশোধিত তথ্যের পক্ষে প্রামাণিক দলিল দিতে হবে।
তথ্য পরিবর্তন প্রক্রিয়া:
১. জন্মতারিখ সংশোধন করতে চাইলে এসএসসি/সমমান পরীক্ষার সনদপত্রের সত্যায়িত কপি সঙ্গে জমা দিতে হবে। তবে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা যদি এসএসসির কম হয়, তবে পরিচয়পত্রের আগে ব্যবহূত কোনো প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। যেমন—পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন সনদ, নিকাহনামা প্রভৃতি।
২. নাম সংশোধন করতে চাইলে তাকে কোর্টের মাধ্যমে নাম এফিডেভিট করত হবে এবং সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে পরিচয়পত্রে ব্যবহূত নাম, ঠিকানা ও প্রকৃত নাম উল্লেখ করতে হবে এবং এর সঙ্গে অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
৩. যাঁরা বিয়ের পর বাবার নামের বদলে স্বামীর নাম লিখতে চান, তাঁদের আবেদনের সঙ্গে কাবিননামা ও স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি জমা দিতে হবে।
৪. স্বামীর নাম বাদ দিয়ে বাবার নাম বসাতে চাইলে প্রামাণিক দলিল হিসেবে তালাকনামা ও বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
৫. কারও পরিচয়পত্রে মায়ের নাম ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য মা ও বাবা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।
৬. পরিচয়পত্র সংশোধনের আবেদন পাওয়ার ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সংশোধিত নতুন পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়। তবে সংশোধনের জন্য আবেদনের সঙ্গে দেওয়া প্রমাণপত্র যথাযথ না হলে সেগুলো তদন্ত করে সঠিক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ-সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন আপনার জেলা/উপজেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অথবা ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র সহায়তা প্রদান প্রকল্প, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, আগারগাঁও, ঢাকা। ফোন: ৮১৫০৮৪৬
বিবিধ সংশোধন জাতীয় পরিচয়পত্রে কোনো নামের আগে পদবি, উপাধি, খেতাব ইত্যাদি সংযুক্ত করা যাবে না। পিতা বা স্বামী বা মাতাকে মৃত উল্লেখ করতে চাইলে মৃত্যুর সনদ দাখিল করতে হবে। জীবিত পিতা বা স্বামী বা মাতাকে ভুলক্রমে মৃত হিসেবে উল্লেখ করার কারণে পরিচয়পত্র সংশোধন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পরিচয়পত্রের কপি দাখিল করতে হবে।
নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই ১৮ বছর বা ততোধিক হতে হবে। এবং আপনার সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার লিষ্টে নাম উঠাতে হবে। তবে আপনি যেকোন সময় চাইলেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করাতে পারবেন না। সরকার নির্ধারিত সময়ে ভোটার তালিকা করার সময় আপনি এ সুযোগ পাবেন।
যদি আপনার শিক্ষার জন্য বিদেশ সফর, চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমন বা কাজের জন্য বিদেশ যেতে হয় এবং প্রয়োজনীয় কাজের জন্য প্রয়েআাজন হয় যা আপনি প্রমান করতে পারেন তাহলে আপনাকে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদান করা হবে।জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে চিন্তা না করে, যত তাড়াতাড়ি নিকষ্টস্থ নির্বাচন কমিশনের অফিসে যোগাযোগ করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহন করুন।